Status

প্রেমের কবিতা | ৩৫+ সেরা প্রেমের কবিতা [রোমান্টিক, গভীর, নজরুল, বিখ্যাত]

আপনি কি প্রেমের কবিতা খুঁজছেন? যদি খুঁজে থাকেন তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন। এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাদের সাথে সেরা সকল বিভিন্ন ধরনের সেরা সকল প্রেমের কবিতা শেয়ার করব। যা আপনার কাছে অনেক ভালো লাগবে বলে আমি আশা করছি।

প্রেমের কবিতা সাধারণত অনেক রোমান্টিক হয়ে থাকেন। অবসর সময়ে এ ধরনের কবিতাগুলো পড়ে মন অনেকখানি ভালো করা যায়। আবার পছন্দের মানুষে পাঠাতে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দেওয়ার ক্ষেত্রেও এসকল কবিতা ব্যবহার করা যেতে পারে।

গভীর প্রেমের কবিতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা, রোমান্টিক, আধুনিক, নজরুলের, জীবনানন্দ দাশের, ১৮+, বিখ্যাত ইত্যাদি সকল ধরনের অসাধারণ কিছু কবিতা আর্টিকেলটিতে শেয়ার করার চেস্টা করব। আশা করছি কবিতাগুলো আপনার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে কবিতাগুলো দেখে নেওয়া যাক।

Table of Contents

প্রেমের কবিতা

প্রথমে আপনাদের সাথে শেয়ার করে নিচ্ছি সেরা সকল ও অসাধারণ প্রেমের কবিতা সমূহ। আশা করছি এসকল কবিতাগুলো আপনার কাছে অনেক ভালো লাগবে। নিম্নে কবিতাগুলো একে একে দিয়ে দেওয়া হলো।

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা – জাহাঙ্গীর রেজা

তোমাদের এই এত বড় শহরে,
এত আপনজনের ভিড়ে,
আমার নিজেকে বড় একা লাগে, শুণ্য লাগে।
বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়।
তোমাদের বুক ভরা ভালোবাসা দেখে আমার বড় হিংসে হয়।
আমি রাতে ঘুমোতে পারিনা।
এই যে তোমরা দিনরাত স্বপ্ন নিয়ে ফেরি করো,
আমার হতাশ লাগে,
আমি পাগল হয়ে যাই,
দিনশেষে ব্যথায় কাতর হয়ে উঠি,
নিজের ব্যর্থতা পাগল করে ফেলে আমাকে।
আমাকে তোমরা নিতে পারোনা কেনো তোমাদের দলে?
আমিওতো তোমাদেরই একজন।
এ সমাজ কোন ব্যর্থতার বোঝা রাখতে চায়না,
কাউকে সুযোগ দিতে চায়না,
আছড়ে ফেলে দেয়,
দূর দূর করে দেয়।
আমি তোমাদের কাছে আজ সুখ চাইতে এসেছি,
করুণা নিতে নয়।
তোমাদের কাছে স্নেহ পেতে এসেছি, ধিক্কার পেতে নয়।
আমাকে তোমরা বরণ করে নাও,
স্বপ্ন দেখার সুযোগ দাও।
আমাকে ফিরিয়ে দিও না,
আমিও হতে চাই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।

চৈত্রের ঝরাপাতা – ফয়সাল হাবিব সানি

তোমার বুক যেনো এখন চৈত্রের উত্তপ্ত উঠান!
আর আজন্ম এ বিশ্বের ভাঁপসা বাতাস নিঃশ্বাসে শুষে চৈত্রের ঝরাপাতার মতো আমি তোমার ঐ বুকের পরে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত, প্রতিক্ষণ ঝরতে থাকি প্রচণ্ড অবলীলায়
তবে প্রত্যহ আমি ঝরাপাতা হয়ে ঝরলেও আমার বাসনারা উদ্যত আজ তোমার বুকে ঝরে যেতে: তোমাকে ছোঁবার সাধ যে এতোদিনে পূর্ণ হয়েছে আমার!
তোমার বুক ছুঁয়েছি কেবল, কিন্তু হৃদয়কে ছুঁতে পারিনি আজও।
তোমার হৃদয়কে ছোঁবার সাধ, বাসনা, বাঞ্চা আমৃত্যু আমার শরীরের প্রতিটি স্পন্দনে স্পন্দিত, আমার রক্তের ভেতর তোমার রক্তের স্রোত নিয়ত প্রবহমান…
তবে এভাবে ঝরতে ঝরতে দেখে নিও তোমার বুক ভেদ করে ঠিকই তোমার হৃদয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যাব কোনো একদিন, দিনশেষে অপরাহ্নের সূর্যের ন্যায় রাঙা রক্ত হয়ে কোনো না কোনো একদিন প্রবল বেগে প্রবাহিত হব তোমার শরীরের মধ্যে!

একলা আমি – এসপিএস শুভ

এই পৃথিবীর মাঝে একা-একটা আমার ঘর
একটা জীবন, একটা মন, একটাই সরোবর।
মন বলে চাই তুই আবার কাছে আয়
নির্জন পৃথিবীতে তোমায় না কোথা পাই!
রঙের অযুত পদ্ম লাল গোলাপি নীল,
মন বাগানে উড়ছে আজ শঙ্খচিল।
একলা থাকি, একলা আমি, একলাই রেঁধে খাই
মনের কষ্ট কেউ বুঝেনা হৃদমন পুড়ে ছাই:
একলা আমি বনের ধারে একলা বসে রই
কুঁড়ে ঘরে চাঁদনি রাতে একলা জেগে রোই।
তোমার অপেক্ষায় দিন কাটছি আসবে কবে হায়,
তোমায় আমি খুঁজে খুঁজে কোথা না পাই!
একলা মনে বনের ধারে চুপটি করে তাই
আপন মনে বনের ধারে কবিতা গান গাই॥

স্বপ্নকাব্য – এসপিএস শুভ

তুমি আমি,
দুজনে হাতে হাত রাখি
স্বপ্নের মাঝে ভালবাসা মাখি…

এসো,
তুমি আমি স্বপ্ন দেখি
বিশ্ব ঘুরে অজানা ফাঁকি।

সে বিশ্বে,
তুমি আমি দুজনে একা
সে পথ চলেছে আঁকা বাঁকা..

দুজনে,
বেঁধেছি ছোট্ট একটা ঘর
সারা জনম হবোনা পর।

এই তো,
পূরণ করবো আজ স্বপ্নকে
জড়িয়ে ধরলাম যে তোমাকে..

এভাবে,
ভালবাসা থাকবে কি জনম কাল?
তুমি আমি দুজনার চিরকাল॥

যদি তুমি চাও

আমি উড়ো চিঠি হব
মেঘেদের বাড়ি যাব
পাখিদের ভীড়ে হারাবো
যদি তুমি চাও।

তোমার জানালা দিয়ে আসা আলো হব
তোমার বাগানের ফুল হব
তোমার ফেলে রাখা কলম হব
যদি তুমি চাও।

তোমার না বলা কথা হব
তোমার না গাওয়া গান হব
তোমার হাসির কারন হব
যদি তুমি চাও।

তোমার উদাসী মনের মাঝি হব
তোমার নিঃচুপ চোখের চাওনি হব
তোমার না লেখা গল্পের শিরোনাম হব
যদি তুমি চাও।

যদি তুমি চাও তবে
ওই আকাশে জোসনা রবে
তোমার ঠোটে হাসির দেখা ফেলে
অজানাতেও দেব পাড়ি সব দুঃখ ভুলে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর অনেক কবিতা অনেক পছন্দ করেন। প্রেম সম্পর্কিত তার লেখা অনেক কবিতা রয়েছে। চলুন এধরনের কিছু প্রেমের কবিতা দেখে নেওয়া যাক।

আমার মিলন লাগি তুমি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার মিলন লাগি তুমি
আসছ কবে থেকে।
তোমার চন্দ্র সূর্য তোমায়
রাখবে কোথায় ঢেকে।
কত কালের সকাল-সাঁঝে
তোমার চরণধ্বনি বাজে,
গোপনে দূত গৃহ-মাঝে
গেছে আমায় ডেকে।
ওগো পথিক, আজকে আমার
সকল পরাণ ব্যেপে
থেকে থেকে হরষ যেন
উঠছে কেঁপে কেঁপে
যেন সময় এসেছে আজ,
ফুরালো মোর যা ছিল কাজ –
বাতাস আসে, হে মহারাজ,
তোমার গন্ধ মেখে।

অনন্ত প্রেম – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শতবার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয় গাঁথিয়াছে গীতহার–
কত রূপ ধরে পরেছ গলায়, নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
যত শুনি সেই অতীত কাহিনী, প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতি পুরাতন বিরহমিলন কথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমিররজনী ভেদিয়া তোমারি মুরতি এসে
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।
আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি যুগলপ্রেমের স্রোতে
অনাদি কালের হৃদয়-উৎস হতে।
আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধুর নয়নসলিলে, মিলনমধুর লাজে–
পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।
আজি সেই চির-দিবসের প্রেম অবসান লভিয়াছে,
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ, নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে সকল প্রেমের স্মৃতি–
সকল কালের সকল কবির গীতি।

আমার এ প্রেম নয় তো ভীরু – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার এ প্রেম নয় তো ভীরু,
নয় তো হীনবল –
শুধু কি এ ব্যাকুল হয়ে
ফেলবে অশ্রুজল।
মন্দমধুর সুখে শোভায়
প্রেম কে কেন ঘুমে ডোবায়।
তোমার সাথে জাগতে সে চায়
আনন্দে পাগল।
নাচ যখন ভীষণ সাজে
তীব্র তালের আঘাত বাজে,
পালায় ত্রাসে পালায় লাজে
সন্দেহ বিহবল।
সেই প্রচন্ড মনোহরে
প্রেম যেন মোর বরণ করে,
ক্ষুদ্র আশার স্বর্গ তাহার
দিক সে রসাতল।

আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার,
পরানসখা বন্ধু হে আমার।
আকাশ কাঁদে হতাশ-সম,
নাই যে ঘুম নয়নে মম,
দুয়ার খুলি হে প্রিয়তম,
চাই যে বারে বার।
পরানসখা বন্ধু হে আমার।
বাহিরে কিছু দেখিতে নাহি পাই,
তোমার পথ কোথায় ভাবি তাই।
সুদূর কোন নদীর পারে,
গহন কোন অন্ধকারে
হতেছ তুমি পার।
পরানসখা বন্ধু হে আমার।

প্রেমের কবিতা ১

প্রেমে প্রাণে গানে গন্ধে আলোকে পুলকে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রেমে প্রাণে গানে গন্ধে আলোকে পুলকে
প্লাবিত করিয়া নিখিল দ্যুলোক-ভূলোকে
তোমার অমল অমৃত পড়িছে ঝরিয়া।
দিকে দিকে আজি টুটিয়া সকল বন্ধ
মুরতি ধরিয়া জাগিয়া উঠে আনন্দ:
জীবন উঠিল নিবিড় সুধায় ভরিয়া।
চেতনা আমার কল্যাণ-রস-সরসে
শতদল-সম ফুটিল পরম হরষে
সব মধু তার চরণে তোমার ধরিয়া।
নীরব আলোকে জাগিল হৃদয়প্রান্তে
উদার উষার উদয়-অরুণ কান্তি,
অলস আঁখির আবরণ গেল সরিয়া।

১৮+ প্রেমের কবিতা

১৮+ কিছু অসাধারণ প্রেমের কবিতা নিম্নে দিয়ে দেওয়া হলো। আশা করছি আপনার কাচেহ কবিতাগুলো অনেক ভালো লাগবে।

ভালবাসার কবিতা – তানজির হোসেন পলাশ

মনের মধ্যে প্রবহমান ঝর্ণা
এনে দিল ভালবাসার বন্যা।
ভাসিয়ে নিল বিস্মৃতির ভেলা
শুরু হল ভালবাসার খেলা।
খেলবো দুজন, খেলবো নিশিদিন
শেষ হবে না কভু ভালবাসার ঋণ।
মন তাই উচ্ছ্বল, চঞ্চল
ছুটে চলেছে দিগন্তে বনাঞ্চল।
আটকে গেল হৃদয় কোঠরে
বলি, ঘুমিও না, জেগে ওঠরে।
আমি কবি এনেছি বারতা
সবই তোমার জন্য, ভালবাসার কবিতা।

আমি হাত ছুঁয়ে আছি তোমার – মনিরা বাকী

কলমটা ধরে থাকে হাত পরম মমতা নিয়ে,
যখন একে একে সব চলে যায় দৃষ্টি সীমার বাইরে
কলমটা সাথে থেকে যায়।
জানে না সে উচ্ছিষ্টের মতো ছুড়ে ফেলে দিতে:
খুব বেশি কাছে টানার প্রক্রিয়াও নেই জানা,
জানে না কি করে মানে অভিমানে ভুলাতে হয়
তবু আর সবাই যখন ছেড়ে চলে যায়:
চারপাশে বেজে ওঠে তীব্র বিষাদ নিনাদ:
শুধু সেই ছুঁয়ে থাকে এ হাত।
পরম মমতা নিয়ে বলে তুমি এগোও –
আমি হাত ছুঁয়ে আছি তোমার।।

তোমাকে নিয়েই ভাবছি – শাওন

তোমাকে নিয়েই ভাবছি
তোমাকে নিয়ে যে ভাবতে হবে
তা কিন্তু, প্রথম দেখায় ভাবিনি
আর এখন…
আমার ভাবনার আকাশটি দখলে তোমার
আজ আবার অনেক দিন পরে
তোমায় নিয়ে লিখতে বসলাম
হাজারটা প্রশ্ন ছুড়ে দিওনা আবার
কি লিখছো, কি ভাবছো?
তুমি তো বেশ ভাল করেই জান
এর উত্তর আমি তোমায় দিতে পারবো না
ভাবতে ভাল লাগে তোমায় নিয়ে
লিখতে ভাল লাগে তোমায় ভেবে।
তোমার এটা বেশ ভাল করেই জানা
আমার মনের কথাগুলি আমি কখনোই
তোমাকে গুছিয়ে বলতে পারিনি
আর তুমি ই বলো
ভাবনার কথা গুলি যদি নাই বলি
তবে এতে এমন কিইবা ক্ষতি?
না বলা এই কথাগুলি
এ হৃদয়ে বেশ ভাল আছে
আমি তা বলছি না,
তবে এখনি সুন্দর একথাগুলিকে
আমি বিবস্ত্র করতে চাইনা।
আর কটাদিন সময় দাও
আমি ঠিকই এইদিন
না বলা এ কথাগুলি
তোমার হাতে রেখে হাত
কোন এক পূর্নিমা রাতে
তোমার পাশে বসে
গান বা কবিতার সুরে
নয়তো বা খোকাদের মতো
এক দমেই সব শুনিয়ে দিবো।

তুমি এবং আমি

তুমি এবং আমি
তুমি নদী, আমি মরু
আমি ঘাস, তুমি গরু।
আমি চা, তুমি কাপ
তুমি মা, আমি বাপ।
তুমি কবিতা, আমি কবি
আমি ভাই, তুমি ভাবী।
তুমি ছুরি , আমি কাঁচি
আমি চাচা, তুমি চাচী।
তুমি চুড়ি, আমি মালা
আমি খালু, তুমি খালা।
আমি কাপড়, তুমি জামা
তুমি মামী, আমি মামা।
আমি মিষ্টি, তুমি ছানা
তুমি নানী, আমি নানা।
আমি আশা, তুমি ভালোবাসা

চাঁদ বৃষ্টি – শুভ্র

চাঁদের আলোর সাথে ঝড়ো বাতাস মিলে গেলে হয় শিহরন
সে কাঁপুনির উপর এলোপাথারি মেঘের আচরন
সব মিলে মিশে এক অচেনা স্বর্গের প্রতিবেদন।
মেঘ গলে চাঁদের আলো বের হতে গেলে গায়ে মাখে বৃষ্টি কণা
ভেজা আলো বাতাসে গা শুকাতে এসে আর ফেরে না
ভরে যায় সুখের সুচনায় চোখের অন্ধকার আঙিনা।
চাঁদের আলো দেখতে ঠিক তোমার সাথে আমার প্রথম দেখার মতো
নিরাকার অনুভবে মনোভাব বুঝে নেবার অস্থিরতায় অনু পরমানু অসংযত
তারপর থেকে অমবস্যা পূর্ণিমার চক্রে জীবনটাও আমাদের অবিরত।
তুমিও অসময়ে কেঁদে কেঁদে ভিজিয়েছো চাঁদের আলোকে বহুবার
আমাদের হাসি কান্নার ভালোবাসা দিন মাস বছরের আদলে চক্রাকার
তবু তুমি সব থেকে সুন্দর আর বাকি সব কিছু এখনো কদাকার।

রোমান্টিক প্রেমের কবিতা

রোমান্টিক প্রেমের কবিতা খুঁজছেন? চিন্তা করবেন না। আপনাদের জন্য আমাদের এই আর্টিকেলটিতে সেরা কিছু রোমান্টিক কবিতা রয়েছে। চলুন এধরনের কিছু প্রেমের কবিতা দেখে নেওয়া যাক।

প্রেমের কবিতা ৩

কথা আছে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

বহুক্ষণ মুখোমুখি চুপচাপ, একবার চোখ তুলে সেতু
আবার আলাদা দৃষ্টি, টেবিলে রয়েছে শুয়ে
পুরোনো পত্রিকা
প্যান্টের নিচে চটি, ওপাশে শাড়ির পাড়ে
দুটি পা-ই ঢাকা
এপাশে বোতাম খোলা বুক, একদিন না-কামানো দাড়ি
ওপাশে এলো খোঁপা, ব্লাউজের নীচে কিছু
মসৃণ নগ্নতা
বাইরে পায়ের শব্দ, দূরে কাছে কারা যায়
কারা ফিরে আসে
বাতাস আসেনি আজ, রোদ গেছে বিদেশ ভ্রমণে।
আপাতত প্রকৃতির অনুকারী ওরা দুই মানুষ-মানুষী
দুখানি চেয়ারে স্তব্ধ, একজন জ্বলে সিগারেট
অন্যজন ঠোঁটে থেকে হাসিটুকু মুছেও মোছে না
আঙুলে চিকচিকে আংটি, চুলের কিনারে একটু ঘুম
ফের চোখ তুলে কিছু স্তব্ধতার বিনিময়,
সময় ভিখারী হয়ে ঘোরে
অথচ সময়ই জানে, কথা আছে, ঢের কথা আছে।

তাকাও যদি – শামসুর রাহমান

অমন তাকাও যদি একবিন্দু অনন্তের মতো চোখ মেলে,
আমি বারবার
তোমার দিকেই ছুটে আসবো প্রত্যহ।
যেখানে তোমার দৃষ্টি নেই,
তোমার পায়ের ছাপ পড়ে না যেখানে কেনোদিন
সেখানে কী করে থাকি? তোমাকে দেখার জন্যে আমি
যশের মুকুট
ছুঁড়ে দেবো ধূলায় হেলায়, তাকাবো না ফিরে ভুলে
কস্মিনকালেও আর। মেনে নেবো হার, এই খর
মধ্যাহ্নেই হয়ে যাবো স্বেচ্ছায় সূর্যাস্ত: জেনে রাখো,
তোমাকে দেখার জন্যে বেহেস্তী আঙুর আর কয়েক ডজন
হুরীর লালচ আমি সামলাতে পারবো নিশ্চিত।
তোমার নিদ্রার ঢেউয়ে ঢেউয়ে যাবো বেয়ে ছিপ নৌকো
এবং লাফিয়ে পড়ে তোমার স্বপ্নের তটে আবিষ্কারকের
মতো দেবো পুঁতে
আমার নিঃশ্বাসে আন্দোলিত এক পবিত্র নিশান।
কখনো নিদ্রার রাজপথে, কখনো-বা জাগরণে
বাগানে কি পার্কে
সড়কে ট্রাফিক দ্বীপে, বাসে
গোলাপ শ্লোগান হাঁকে একরাশ, উড়ন্ত কপোত
অকস্মাৎ দিগ্বিদিক লুটোয় নিষিদ্ধ
ইস্তাহার হয়ে,
পড়ি, নরকেও ভালোবাসা ম্যানিফেস্টো হিরন্ময়।
অমন দাঁড়াও যদি নিরিবিলি পা রেখে চৌকাঠে,
সমর্পণ করতে পারি আমার সমস্ত আয়ুষ্কাল
তোমারই আঁচলে।
যদি পাপ তোমার শরীর হয়ে নত নয়, হয় উন্মোচিত,
দ্বিধাহীন তাকে খাবো চুমো গাঢ়, বাঁধবো ব্যাকুল আলিঙ্গনে।

তোমাকেই চাই – হেলাল হাফিজ

আমি এখন অন্য মানুষ ভিন্ন ভাবে কথা বলি
কথার ভেতর অকথিত অনেক কথা জড়িয়ে ফেলি
এবং চলি পথ বেপথে যখন তখন।
আমি এখন ভিন্ন মানুষ অন্যভাবে কথা বলি
কথার ভেতর অনেক কথা লুকিয়ে ফেলি,
কথার সাথে আমার এখন তুমুল খেলা
উপযুক্ত সংযোজনে জীর্ণ-শীর্ণ শব্দমালা
ব্যঞ্জনা পায় আমার হাতে অবলীলায়,
ঠিক জানি না পারস্পরিক খেলাধূলায়
কখন কে যে কাকে খেলায়।
অপুষ্টিতে নষ্ট প্রাচীন প্রেমের কথা যত্রতত্র কীর্তন আমার
মাঝে মধ্যে প্রণয় বিহীন সভ্যতাকে কচি প্রেমের পত্র লিখি
যেমন লেখে বয়ঃসন্ধি-কালের মানুষ নিশীথ জেগে।
আমি এখন অন্য মানুষ ভিন্নভাবে চোখ তুলে চাই
খুব আলাদা ভাবে তাকাই
জন্মাবধি জলের যুগল কলস দেখাই,
ভেতরে এক তৃতীয় চোখ রঞ্জনালোয় কর্মরত
সব কিছু সে সঠিকভাবে সবটা দেখে এবং দারুণ প্রণয় কাতর।
আমি এখন আমার ভেতর অন্য মানুষ গঠন করে সংগঠিত,
বীর্যবান এক ভিন্ন গোলাপ এখন কসম খুব প্রয়োজন।

চতুরের ভূমিকা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

কিছু উপমার ফুল নিতে হবে নিরুপমা দেবী
যদিও নামের মধ্যে বেখেছেন আসল উপমা
ক্ষণিক প্রশ্রয়-তুষ্টি চায় আজ সামান্য এ কবি,
রবীন্দ্রনাথেরও আপনি চপলতা করেছেন ক্ষমা।
যদিও প্রত্যহ আসে অগণিত সুঠাম যুবক
নানা উপহার আনে সময় সাগর থেকে তুলে
আমি তো আনি নি কিছু চম্পা কিংবা কুর্চি কুরুবক
সাজাতে চেয়েছি শুধু স্পর্শহীন উপমার ফুলে।
আকাশে অনেক সজ্জা, তবু স্থির আকাশের নীল
সামান্য এ সত্যটুকু, শোনাতে চেয়েছি আপনাকে
শব্দ আর অলঙ্কারে খুঁজে খুঁজে জীবনের মিল
দেখিছি সমস্ত সাধ অন্য এক বুকে সুপ্ত থাকে।
আশা করি এতক্ষণে এঁকেছি আমার পটভূমি।
যদি অনুমতি হয় আজ থেকে শুরু হোক, তুমি।।

কী করে ভালোবাসবো – পূর্ণেন্দু পত্রী

কী করে ভালোবাসবো বল কী করে ভালোবাসবো বল সখী,
মরুভূমির মতন যদি প্রাণের দাহে অহরহই জ্বলি,
হৃদয়ে যদি গভীর ক্ষত বালুচরের মতন গ্রাস করে,
কী করে ভালোবাসবো বল কী করে ভালোবাসবো বল সখী।
দগ্ধ যদি বুকের টানে আমার সব হাসিরা ঝরে যায়,
আমার সব সকাল আর রাত্রি যদি কাঁদনে ছলোছলো,
আমার সব সূর্যমুখী পাপড়ি ছিড়ে ধুলোয় যদি মেশে,
কী করে ভালোবাসবো বল কী করে ভালোবাসবো বল সখী।
আমার সুখ সাধের ঘরে পিদিম যদি না জ্বলে কোনোদিন,
আমার দূর মাঠের শেষে দুগোছা ধান না যদি পায় রোদ
আমার আম-মউল-স্বাদ হাওয়ায় যদি বারুদ-বিষ ছড়ায়,
কী করে ভালোবাসবো বলকী করে ভালোবাসবো বল সখী।
প্রতিটি অনাহারের রাতে সাপের ফনা দারালো তলোয়ার,
প্রতিটি রোগশোকের দিনে বেদনা যেন শিকারী কোনো রাহু
প্রতিটি মরা মনের ডালে শুকনো সব কুন্দকলি কাঁদে,
মুক্তমাখা পাপিয়ারও সুখের গান শিকলে গাঁট বাঁধা।
কী করে ভালোবাসবো আজ কী করে ভালোবাসাবো বল সখী,
আঁধার -ঘোর আমার ঘরে যদি না কেউ বীরের মতো এসে
জ্বালিয়ে যায় আগুনে এই পাষাণপুরী মনের মণি-মানিক,
কী করে ভালোবাসবো তবে কী করে ভালোবাসবো বল সখী।

গভীর প্রেমের কবিতা

গভীর কিছু প্রেমের কবিতা চলুন দেখে নেই। আশা করছি এসকল গভীর কবিতাগুলো আপনার কাছে ভালো লাগবে।

দোলনচাঁপার মায়াটান

দোলনচাঁপা গলির শেষ বাড়ি।
শুভ্রতা যার না।
শুভ্রতা নামক ইটের পাহাড়ের চূড়ায়।
গোধূলির শেষে নীল শাড়ি পরে।
কোন তরুণী এখন রাস্তা চেয়ে গুণগুণ করে না।
মায়াভরা রাস্তা দিয়ে তবুও হেটে যাই।
শুভ্রতা নামক পাহাড়ের চূড়ায় একটি কাক।
সে নির্বাক চেয় রয় !
হদলে রাঙ্গা এই বামনের দিকে।
তার ঘন কালো মায়াময় চোখে ক্ষোভ।
নিরবে বলে চলছে।
মায়াময় রাস্তা তোর জন্য নয়।
চলে যা কৃষ্ণতলা।
যেখানে লুকায়িত শহরের অভিমান।
তোর পদধূলিতে জমে পবিত্র পাপ!
না আর যাব না দোলনচাঁপার শেষ প্রান্তে।
আমার স্পর্শে যে তার পবিত্র পাপ হয়।
তবুও ভূলে যাই দোলনচাঁপার শুভ্রতা আমার জন্য নয়!

প্রেমের কবিতা ২

ভালোবাসার রাজপুত্র

তোমার আমার বয়স বারে,
মনের বয়স বারেনা,
তুমি আমি একই আছি,
কেউ তো তা জানেনা,
হঠাৎ করে তুমি এলে আমার জীবনে,
মনটা আমার সাত রংঙে রাঙিয়ে দিয়ে গেলে,
এখন আমার ভাবনাতে শুধু তুমি থাকো,
তোমার বুকের মাঝে বন্ধু আমায় রেখো,
তুমি আমার চোখের জল,
তুমি আমার হাসি,বন্ধু তোমায় কতো যে ভালোবাসি,
তুমি কেনো বোঝোনা রে বন্ধু,
তুমি কেনো বোঝনা,
আমার এমন তোমাকে ছাড়া কিছুই তো বোঝেনা,
সারাজীবন থেকো পাশে,
হাতটা আমার ছেড়ো না,
তোমায় কতো ভালোবাসি তুমি কেনো বোঝোনা,
বন্ধু তুমি কেনো বোঝোনা,
আমার এ গান শুধু তোমার জন্য,
ভালোবাসার রাজপুত্র।

ভালোবাসার মানি ও তুমি

আচ্ছা ভালোবাসা মানি কী?
আমার দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে অন্য কারো সাথে ভালোবাসার গান গাওয়া?
ভালোবাসার মানি কী, শুধুই স্মৃতি?
ভালোবাসার মানি কী, শত ভীড়ের মাঝে সুধুই তাকে খোঁজা?
হয়তো ভালোবাসার মানি, তার চুলের গন্ধ পেয়ে সারাটা এলাকা তাকে খুঁজে বেড়ানো
হয়তো ভালোবাসা মানি তাকে একপলক দেখার জন্য তার বাসার গলিটায় সারাদিন বসে থাকা
ভালোবাসা মানি কী, তার মুখটা স্বপ্নে দেখে একটি নির্ঘুম রাত?
আজও অপেক্ষায় আছি
তুই একদিন ফিরে আসবে আমার শহরে
আজও বিশ্বাস হয় না তুমি আমার নও!
তোমার স্মৃতি আজও ঘুমাতে দেয় না
দিন শেষে আজও নিজেকে একা মনে হয়।
আচ্ছা দেয়ালটা কী ভেঙ্গে ফেলা যায় না?
নাহ যায় না!
হয়তো ভালোবাসা মানি আমি জানি না
তবে জানি, তুমি আমার বুকের গভীর অন্ধকারে ছিলে!

রূপন্তিমা – মতিয়ার রহমান

রূপন্তিমা, আমি তোমাকে খুঁজে পাই,ফুলবাগানের প্রজাপতির মাঝে
হাসনাহেনা, গন্ধরাজ, শিউলি ফুলের রঙে
মধ্যরাতের ঝিঝিপোকার ডাকে, ভোরের পাখির কোলাহলে ।
আমি তোমাকে খুজে পাই মটরশুটির ক্ষেতে, চন্দনা নদীর তীরে ।
দূর্বাঘাসের পাখনায়, ভিজে মেঘের দুপুরে।
আমি তোমাকে খুঁজে পাই নিরহংকার পথে, নিরহংকার মনে।
আলোকিত শাসনে, আমার ভবিষ্যতে
আমি তোমাকে খুঁজে পাই শতাব্দীর নীল আকাশে, বাঁকা চাঁদে ।
দিনের কমলা রোদে, বিলুপ্ত নগরীর পাশে ।
আমি তোমাকে খুঁজে পাই মুক্তমঞ্চের শ্বাসরুদ্ধ স্লোগানে, ক্ষুধার্তদের পাণ্ডলিপিতে।
প্রতিবাদি নারীর আক্রোসে, নতুন ভোরের আকাঙ্খাতে।
আমি তোমাকে খুঁজে পাই বিস্তির্ণ উল্লাসে, স্বপ্নের ধ্বনিতে ।
পৃথিবীর ক্রমমুক্তিতে, আমার নিস্তব্ধ অতীতে।
আমি তোমাকে খুঁজে পাই ক্লান্তহীন নাবিকের গর্বে, রক্তক্লান্ত কাজের আহ্বানে।
প্রতিশ্রুতি রক্ষার সাহসিকতায়, শান্তি সংঘের ধর্মে, নির্বাণে ।
আমি তোমাকে খুজে পাই আমার উদ্যম অনুপ্রেরণায়,
আমার দাঁড়িয়ে থাকা শ্রেষ্ঠতর বেলাভূমিতে।

হৃদয়ের ঋণ – হেলাল হাফিজ

আমার জীবন ভালোবাসাহীন গেলে
কলঙ্ক হবে কলঙ্ক হবে তোর,
খুব সামান্য হৃদয়ের ঋণ পেলে
বেদনাকে নিয়ে সচ্ছলতার ঘর
বাঁধবো নিমেষে। শর্তবিহীন হাত
গচ্ছিত রেখে লাজুক দুহাতে আমি
কাটাবো উজাড় যুগলবন্দী হাত
অযুত স্বপ্নে। শুনেছি জীবন দামী,
একবার আসে, তাকে ভালোবেসে যদি
অমার্জনীয় অপরাধ হয় হোক,
ইতিহাস দেবে অমরতা নিরবধি
আয় মেয়ে গড়ি চারু আনন্দলোক।
দেখবো দেখাবো পরস্পরকে খুলে
যতো সুখ আর দুঃখের সব দাগ,
আয় না পাষাণী একবার পথ ভুলে
পরীক্ষা হোক কার কতো অনুরাগ।

নজরুলের প্রেমের কবিতা

কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনিও প্রেম সম্পর্কিত অনেক কবিতা লিখেছেন। প্রেম সম্পর্কিত তার লেখা কয়েকটি কবিতা দেখে নেওয়া যাক।

তুমি জানি প্রিয় – কাজী নজরুল ইসলাম

আসিবে তুমি জানি প্রিয়
আনন্দে বনে বসন্ত এলো
ভুবন হল সরসা, প্রিয়-দরশা, মনোহর।
বনানতে পবন অশান্ত হল তাই
কোকিল কুহরে, ঝরে গিরি নির্ঝরিণী ঝর ঝর।
ফুল্ল যামিনী আজি ফুল সুবাসে
চন্দ্র অতন্দ্র সুনীল আকাশে
আনন্দিত দীপান্নিত অম্বর।
অধীর সমীরে দিগঞ্চল দোলে
মালতী বিতানে পাখি পিউ পিউ বোলে
অঙ্গে অপরূপ ছন্দ আনন্দ-লহর তোলে
দিকে দিকে শুনি আজ আসিবে রাজাধিরাজ
প্রিয়তম সুন্দর।।

গোপন প্রিয়া – কাজী নজরুল ইসলাম

পাইনি বলে আজো তোমায় বাসছি ভালো, রাণি,
মধ্যে সাগর, এ-পার ও-পার করছি কানাকানি!
আমি এ-পার, তুমি ও-পার,
মধ্যে কাঁদে বাধার পাথার
ও-পার হতে ছায়া-তরু দাও তুমি হাত্ছানি,
আমি মরু, পাইনে তোমার ছায়ার ছোঁওয়াখানি।
নাম-শোনা দুই বন্ধু মোরা, হয়নি পরিচয়!
আমার বুকে কাঁদছে আশা, তোমার বুকে ভয়!
এই-পারী ঢেউ বাদল-বায়ে
আছড়ে পড়ে তোমার পায়ে,
আমার ঢেউ-এর দোলায় তোমার করলো না কূল ক্ষয়,
কূল ভেঙেছে আমার ধারে-তোমার ধারে নয়!
চেনার বন্ধু, পেলাম না ক জানার অবসর।
গানের পাখী বসেছিলাম দুদিন শাখার পর।
গান ফুরালো যাব যবে,
গানের কথাই মনে রবে,
পাখী তখন থাকবো না ক-থাকবে পাখীর স্বর!
উড়ব আমি,-কাঁদবে তুমি ব্যথার বালুচর!
তোমার পারে বাজ্ল কখন আমার পারের ঢেউ,
অজানিতা! কেউ জানে না, জানবে না ক কেউ।
উড়তে গিয়ে পাখা হতে
একটি পালক পড়লে পথে
ভুলে প্রিয় তুলে যেন খোঁপায় গুঁজে নেও!
ভয় কি সখি? আপনি তুমি ফেলবে খুলে এ-ও!
বর্ষা-ঝরা এমনি প্রাতে আমার মত কি
ঝুরবে তুমি এক্লা মনে, বনের কেতকী?
মনের মনে নিশীথ্-রাতে
চুম্ দেবে কি কল্পনাতে?
স্বপ্ন দেখে উঠবে জেগে, ভাববে কত কি!
মেঘের সাথে কাঁদবে তুমি, আমার চাতকী!
দূরের প্রিয়া! পাইনি তোমায় তাই এ কাঁদন-রোল!
কূল মেলে না,-তাই দরিয়ায় উঠতেছে ঢেউ-দোল!
তোমায় পেলে থাম্ত বাঁশী,
আস্ত মরণ সর্বনাশী।
পাইনি ক তাই ভরে আছে আমার বুকের কোল।
বেণুর হিয়া শূন্য বলে উঠবে বাঁশীর বোল।
বন্ধু, তুমি হাতের-কাছের সাথের-সাথী নও,
দূরে যত রও এ হিয়ার তত নিকট হও।
থাকবে তুমি ছায়ার সাথে
মায়ার মত চাঁদনী রাতে!
যত গোপন তত মধুর-নাই বা কথা কও!
শয়ন-সাথে রও না তুমি নয়ন-পাতে রও!
ওগো আমার আড়াল-থাকা ওগো স্বপন-চোর!
তুমি আছ আমি আছি এই তো খুশি মোর।
কোথায় আছ কেম্নে রাণি
কাজ কি খোঁজে, নাই বা জানি!
ভালোবাসি এই আনন্দে আপনি আছি ভোর!
চাই না জাগা, থাকুক চোখে এমনি ঘুমের ঘোর!
রাত্রে যখন এক্লা শোব-চাইবে তোমার বুক,
নিবিড়-ঘন হবে যখন একলা থাকার দুখ,
দুখের সুরায় মস্ত্ হয়ে
থাকবে এ-প্রাণ তোমায় লয়ে,
কল্পনাতে আঁক্ব তোমার চাঁদ-চুয়ানো মুখ!
ঘুমে জাগায় জড়িয়ে রবে, সেই তো চরম সুখ!
গাইব আমি, দূরের থেকে শুনবে তুমি গান।
থাম্বে আমি-গান গাওয়াবে তোমার অভিমান!
শিল্পী আমি, আমি কবি,
তুমি আমার আঁকা ছবি,
আমার লেখা কাব্য তুমি, আমার রচা গান।
চাইব না ক, পরান ভরে করে যাব দান।
তোমার বুকে স্থান কোথা গো এ দূর-বিরহীর,
কাজ কি জেনে?- তল কেবা পায় অতল জলধির।
গোপন তুমি আস্লে নেমে
কাব্যে আমার, আমার প্রেমে,
এই-সে সুখে থাক্বে বেঁচে, কাজ কি দেখে তীর?
দূরের পাখী-গান গেয়ে যাই, না-ই বাঁধিলাম নীড়!
বিদায় যেদিন নেবো সেদিন নাই-বা পেলাম দান,
মনে আমায় করবে না ক-সেই তো মনে স্থান!
যে-দিন আমায় ভুলতে গিয়ে
কর্বে মনে, সে-দিন প্রিয়ে
ভোলার মাঝে উঠবে বেঁচে, সেই তো আমার প্রাণ!
নাই বা পেলাম, চেয়ে গেলাম, গেয়ে গেলাম গান!

আধুনিক প্রেমের কবিতা

বর্তমানের সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা কিছু আধুনিক প্রেমের কবিতা আসুন দেখি। কবিতার ছন্দগুলো অনেক সুন্দর ও রোমান্টিক।

প্রথম তুমি – নির্মলেন্দু গুণ

ভুলে যাও তুমি পূর্বেও ছিলে
মনে করো এই বিশ্ব নিখিলে
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না
ছিলে না আকাশে, নদী জলে ঘাসে
ছিলে না পাথরে ঝর্ণার পাশে৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি কিছুতে ছিলে না৷
ফুলেও ছিলে না, ফলেও ছিলে না
নাকে মুখে চোখে চুলেও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি এখানে ছিলে না
এর আগে তুমি সেখানে ছিলে না
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
রাতের পুণ্য লগনে ছিলে না
নীল নবঘন গগনে ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷
এর আগে তুমি তুমিও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷

ভালোবাসি তাই ভালোবাসি

কতো সুন্দরী রমনী দেখিয়া জুরালো এ নয়ন ৷
কোন নারী তবু ছুঁতে পারেনি মনের সিংহাসন ৷
কে তুমি নারী দেখিনি কভূ তোমার রূপের কায়া,
কেনো জানিনা তোমার প্রতি আমার এতো মায়া ৷
মনের সিংহাসনে তুমি করলে আহরন,
তোমার কথা ভাবতেই লাগে অজানা শিহরন ৷
সারাটা দিন তোমার কথা ভাবতে ভালো লাগে,
তোমায় নিয়ে লিখতে গেলেই কবিতার শুর বাজে ৷
নীল আকাশে উরতে যেমন পাখির ভালো লাগে…
তোমায় নিয়ে ভাবতে আমার তেমন ভালো লাগে ৷
জানতে যদি চাও কখনো কেনো ভালোবাসি ….
বলবো আমি উচ্চস্বরে ভালোবাসি…তাই…ভালোবাসি ৷
বলবে তখন পাগল একটা… বলবো তখন আমি,
পাগল নামটা আমার কাছে সবচাইতে দামি।

নীল পরী

তোমার নামেই উড়িয়ে দিলাম –
নীলচে মেঘের দল,
আমার অবাধ্য মনের আস্কারাতে –
নামলো প্রেমের ঢল…
তোমার আকাশ নীলে মনের ভুলে
উড়াই সুখের ঘুড়ি,
তুমি স্বপের মাঝে সত্যি আমার –
ভালোবাসার নীল পরী।

যেদিন হবে দেখা

যেদিন হবে দেখা, মন ভরে সাজিস।..
মায়াভরা ঐ দুচোখে, একটু কাজল আঁকিস।
যেদিন হবে দেখা, নীল শাড়ি পড়িস।..
ছোট্ট এক লাল টিপ, কপালেতে দিস।
যেদিন হবে দেখা, সময়মতো আসিস।..
ঐ কুচকুচে খোপায় তোর, বেলীর মালা বাঁধিস।
যেদিন হবে দেখা, রঙিন মেহেদী দিস।…
মেহেদী রাঙা ঐ দুহাতে, কাঁচের চুরি পড়িস।
যেদিন দেখা হবে, খালি হাতে আসিস।..
ভালোবাসায় ভরিয়ে দেব, দুহাত ভরে নিস

শুধু তোমার অপেক্ষাতে

তোমার জন্য মিষ্টি হাসি
তোমার জন্য সুর।।
তোমার জন্য উদাস হাওয়া
মেঘের সমুদ্দুর।।
তোমার জন্য বাড়ানো হাত
তোমার জন্য সব।।
তোমার জন্য মনে
আমার মাতাল অনুভব।।
তোমার জন্য অনন্ত সুখ তোমার জন্যে গান।।
তোমার জন্য ঠোঁট বাকানো চাপা অভিমান।।
তোমার জন্য সব রেখেছি কারো জন্যে নয়।।
শুধু তোমার অপেক্ষাতে ভয় করেছি জয়।।

জীবনানন্দ দাশের প্রেমের কবিতা

জীবনানন্দ দাশ প্রেম সম্পর্কিত অনেক কবিতা লিখেছে। তার লেখা এধরনের কিছু কবিতা আসুন দেখে নেই।

আমি যদি হতাম – জীবনানন্দ দাশ

আমি যদি হতাম বনহংস
বনহংসী হতে যদি তুমি:
কোনো এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে
ছিপছিপে শরের ভিতর
এক নিরালা নীড়ে:
তাহলে আজ এই ফাল্পুনের রাতে
ঝাউয়ের শাখার পেছনে চাঁদ উঠতে দেখে
আমরা নিম্নভূমির জলের গন্ধ ছেড়ে
আকাশের রুপালি শস্যের ভিতর গা ভাসিয়ে দিতাম-
তোমার পাখনায় আমার পালক, আমার পাখনায় তোমার রক্তের স্পন্দন-
নীল আকাশে খইক্ষেতের সোনালি ফুলের মতো অজস্র তারা,
শিরীষ বনের সবুজ রোমশ নীড়ে
সোনার ডিমের মতো
ফাল্গুনের চাঁদ।
হয়তো গুলির শব্দঃ
আমাদের তির্যক গতিস্রোত,
আমাদের পাখায় পিস্টনের উল্লাস,
আমাদের কন্ঠে উত্তর হাওয়ার গান!
হয়তো গুলির শব্দ আবারঃ
আমাদের স্তব্ধতা,
আমাদের শান্তি।
আজকের জীবনের এই টুকরো টুকরো মৃত্যু আর থাকত না:
থাকত না আজকের জীবনের টুকরো টুকরো সাধের ব্যর্থতা ও অন্ধকার:
আমি যদি বনহংস হতাম,
বনহংসী হতে যদি তুমি:
কোনো এক দিগন্তের জলসিড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে।

হেমন্ত কুয়াশায় – জীবনানন্দ দাশ

সকাল-সন্ধ্যাবেলা আমি সেই নারীকে দেখেছি
জেনেছি অনেক দিন- তারপর তবুও ভেবেছি।
তারপর ঢের দিন পৃথিবীর সেই শাদা সাধারণ কথা
ছোট বড় জিনিসের বিস্মরণে ক্রমে ভুলে গেছি।
আকাশ আমাকে বলেঃ সে না তুমি আত্মসমাহিতি?
পৃথিবী আমাকে দেখে ভেবে যায়ঃ এর প্রাণে, আহা,
লাখেরাজ হয়ে পড়ে রয়েছে সততা:
যে নারীকে নদীর কিনারে জলে ভালোবেসেছিল
সময়ের সুবাতাস মুখ ছঁইয়ে চলে গেলে যদি তার কথা
ভুরু কোঁচকায়ে ভেবে নিতে হয়, মানবহৃদয় তবে সে কোন রকম।
হেমন্তের কুয়াসায় বেড়াতে কারু দাবী
অমল ঋণের মত গ্রহণ করেছি আমি নিতে ভুলে গিয়ে:
তার ভালোবাসা পেয়ে ভয়াবহভাবে সৎ হয়ে আছি-ভাবি।

হৃদয়ে প্রেমের দিন – জীবনানন্দ দাশ

হৃদয়ে প্রেমের দিন কখন যে শেষ হয় — চিতা শুধু পড়ে থাকে তার,
আমরা জানি না তাহা: — মনে হয় জীবনে যা আছে আজো তাই শালিধান রূপশালি ধান তাহা… রূপ, প্রেম… এই ভাবি… খোসার মতন নষ্ট ম্লান
একদিন তাহাদের অসারতা ধরা পড়ে, — যখন সবুজ অন্ধকার,
নরম রাত্রির দেশ নদীর জলের গন্ধ কোন এক নবীনাগতার
মুখখানা নিয়ে আসে — মনে হয় কোনোদিন পৃথিবীতে প্রেমের আহ্বান
এমন গভীর করে পেয়েছি কি? প্রেম যে নক্ষত্র আর নক্ষত্রের গান,
প্রাণ যে ব্যাকুল রাত্রি প্রান্তরের গাঢ় নীল অমাবস্যায় –
চলে যায় আকাশের সেই দূর নক্ষত্রের লাল নীল শিখার সন্ধানে,
প্রাণ যে আঁধার রাত্রি আমার এ, — আর তুমি স্বাতীর মতন
রূপের বিচিত্র বাতি নিয়ে এলে, — তাই প্রেম ধুলায় কাঁটায় যেইখানে
মৃত হয়ে পড়ে ছিল পৃথিবীর শূণ্য পথে সে গভীর শিহরণ,
তুমি সখী, ডুবে যাবে মুহূর্তেই রোমহর্ষে — অনিবার অরুণের ম্লানে
জানি আমি: প্রেম যে তবুও প্রেম: স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে রবে, বাঁচিতে সে জানে।

উপসংহার

আর্টিকেলটিতে অনেক সুন্দর সুন্দর ও সেরা সকল প্রেমের কবিতাসমূহ আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেস্টা করেছি। আশা করছি আপনার আর্টিকেলে থাকা প্রেমের কবিতাগুলো ভালো লেগেছে। কবিতাগুলো আপনার কেমন লেগেছে সেই সম্পর্কে মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।

নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে প্রেমের কবিতার মতোন আরো অনেক আর্টিকেল। ধন্যবাদ আপনাকে এতক্ষণ আমাদের সাথে যুক্ত থাকার জন্য।

Imran Hossan

I am Imran, a student with the dream of becoming a professional developer, I love to explore, explore, learn interesting things on the Internet.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Hey Dear!! Thank you for visit on TuneBN. Please Disable your AD Blocker to continue browsing.